শামসুর রাহমান
শামসুর রাহমান ছিলেন আধুনিক বাংলা কবিতার রূপকার। বিংশ শতকের তিরিশের দশকের পাঁচ মহান কবির পর তিনিই আধুনিক বাংলা কবিতার প্রধানতম পুরুষ হিসেবে স্বীকৃত।
তাঁর জম্ম ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর ঢাকার মাহুতটুলীতে নানার বাড়িতে। পিতার বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরার পাড়াতলী গ্রামে।
শিক্ষাজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে পড়লেও অনার্স ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নেননি। পরে পাস কোর্সে ইংলিশে ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।
তাঁর লেখনির সূত্রপাত ঘটে ১৮/২০ বছর বয়সে। ১৯৪৯ সালে তাঁর আধুনিক কবিতা এবং আন্তর্জাতিক-আধুনিক চেতনার উন্মেষ ঘটে। সাপ্তাহিক 'সোনার বাংলা' পত্রিকায় ১৯৪৯ সালে তাঁর প্রথম প্রকাশিত কবিতা 'উনিশশ'উনপঞ্চাশ' মুদ্রিত হয়। ১৯৬০ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে' প্রকাশিত হয়। মূলত তিনি 'কবি' খ্যাতি পেয়েছেন স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন আবেগ ও প্রত্যাশা নিয়ে লেখা 'বন্দী শিবির থেকে' কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে। এটি প্রকাশিত হয় ১৯৭২ সালে। তিনি 'মজলুম আদিব' ছদ্মনামে এটি রচনা করেন।
তাঁর স্বাধীনতা নিয়ে লেখা জনপ্রিয় কয়েকটি কবিতা রয়েছে। তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা, স্বাধীনতা তুমি ইত্যাদি। এছাড়াও 'আসাদের শার্ট' উনসত্তরের গণ অভ্যুত্থান নিয়ে রচিত এক অনন্য কবিতা। 'বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা' ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত একটি কবিতা।
তিনি কবিতা, প্রবন্ধ, স্মৃতিমূলক রচনা, শিশুতোষ রচনা ইত্যাদি সব শাখায় সমানভাবে বিচরণ করেছেন। মনে পড়ে, 'সাতরঙ' মাসিক পত্রিকার পড়া 'স্মৃতির শহর', 'উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ' ইত্যাদি রচনা।
তিনি তাঁর লেখনির মাধ্যমে লিখার পুরনো ধারাকে বদলে দিয়েছিলেন। ছন্দ ছাড়াও যে কবিতা হয়, তা তিনি তাঁর কবিতায় দেখিয়ে গেছেন। রবীন্দ্র, নজরুল, আহসান হাবীবরা যে পথে হাঁটতে ভীত ছিলেন, সাহসিকতার সাথে শামসুর রাহমানই সেই পথে পথ চলেছেন। তিনি বারবার মৌলবাদিদের দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হলেও নিজের পথ থেকে সরে দাঁড়াননি। সমৃদ্ধ করে গেছেন আমাদের বাংলা সাহিত্যকে। পৌঁছিয়ে দিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়৷
২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট বাংলার আধুনিক কবিতার এই রুপকার মৃত্যুবরণ করেন।।