Wednesday, September 4, 2019

শামসুর রাহমান


শামসুর রাহমান ছিলেন আধুনিক বাংলা কবিতার রূপকার। বিংশ শতকের তিরিশের দশকের পাঁচ মহান কবির পর তিনিই আধুনিক বাংলা কবিতার প্রধানতম পুরুষ হিসেবে স্বীকৃত।

তাঁর জম্ম ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর ঢাকার মাহুতটুলীতে নানার বাড়িতে। পিতার বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরার পাড়াতলী গ্রামে।

শিক্ষাজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে পড়লেও অনার্স ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নেননি। পরে পাস কোর্সে ইংলিশে ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।

তাঁর লেখনির সূত্রপাত ঘটে ১৮/২০ বছর বয়সে। ১৯৪৯ সালে তাঁর আধুনিক কবিতা এবং আন্তর্জাতিক-আধুনিক চেতনার উন্মেষ ঘটে। সাপ্তাহিক 'সোনার বাংলা' পত্রিকায় ১৯৪৯ সালে তাঁর প্রথম প্রকাশিত কবিতা 'উনিশশ'উনপঞ্চাশ' মুদ্রিত হয়। ১৯৬০ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে' প্রকাশিত হয়। মূলত তিনি 'কবি' খ্যাতি পেয়েছেন স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন আবেগ ও প্রত্যাশা নিয়ে লেখা 'বন্দী শিবির থেকে' কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে। এটি প্রকাশিত হয় ১৯৭২ সালে। তিনি 'মজলুম আদিব' ছদ্মনামে এটি রচনা করেন।

তাঁর স্বাধীনতা নিয়ে লেখা জনপ্রিয় কয়েকটি কবিতা রয়েছে।  তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা, স্বাধীনতা তুমি ইত্যাদি। এছাড়াও 'আসাদের শার্ট' উনসত্তরের গণ অভ্যুত্থান নিয়ে রচিত এক অনন্য কবিতা। 'বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা'  ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত একটি কবিতা।

তিনি কবিতা, প্রবন্ধ, স্মৃতিমূলক রচনা, শিশুতোষ রচনা ইত্যাদি সব শাখায় সমানভাবে বিচরণ করেছেন। মনে পড়ে, 'সাতরঙ' মাসিক পত্রিকার পড়া 'স্মৃতির শহর', 'উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ' ইত্যাদি রচনা।

তিনি তাঁর লেখনির মাধ্যমে লিখার পুরনো ধারাকে বদলে দিয়েছিলেন। ছন্দ ছাড়াও যে কবিতা হয়, তা তিনি তাঁর কবিতায় দেখিয়ে গেছেন। রবীন্দ্র, নজরুল, আহসান হাবীবরা যে পথে হাঁটতে ভীত ছিলেন, সাহসিকতার সাথে শামসুর রাহমানই সেই পথে পথ চলেছেন। তিনি বারবার মৌলবাদিদের দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হলেও নিজের পথ থেকে সরে দাঁড়াননি। সমৃদ্ধ করে গেছেন আমাদের বাংলা সাহিত্যকে। পৌঁছিয়ে দিয়েছেন অনন্য উচ্চতায়৷

২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট বাংলার আধুনিক কবিতার এই রুপকার মৃত্যুবরণ করেন।।

সুকান্ত ভট্টাচার্য

সুকান্ত ভট্টাচার্য 


সুকান্ত ভট্টাচার্য বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য নাম৷ তিনি ১৯২৬ সালের ১৫ আগস্ট গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা নিবারুণ ভট্টাচার্য এবং মা সুনীতি দেবী।

তাঁর বাল্যজীবন দারিদ্র্যের মধ্যে অতিবাহিত হয়েছে। তাঁর বাল্যশিক্ষা শুরু হয় কলকাতার কমলা বিদ্যামন্দির থেকে এবং সর্বশেষ ১৯৪৫ সালে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হন।

আট-নয় বছর বয়স থেকেই তাঁর লেখনির বিকাশ ঘটে।  স্কুলের হাতে লেখা পত্রিকা 'সঞ্চয়'য়ে একটি ছোট্ট হাসির গল্প লিখে তিনি আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর বিজন গঙ্গোপাধ্যায়ের 'শিখা' কাগজে তাঁর প্রথম কোনো লিখা ছাপা হয়৷ সেটি ছিল 'বিবেকান্দের জীবনী'। যখন তাঁর বয়স ১১ তখন তিনি 'রাখাল ছেলে' নামে একটি গীতিনাট্য রচনা করেন৷ এটি পরে 'হরতাল' বইতে সংকলিত হয়। তিনি শুধু কবিতা নয়, গল্প, প্রবন্ধ, গীতিনাট্য ইত্যাদিও লিখতেন। পরবর্তীকালে উভয় বাংলা থেকেই 'সুকান্ত সমগ্র' নামে তাঁর রচনাবলি প্রকাশিত হয়।

তিনি রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, মন্বন্তর, ফ্যাসিবাদ আগ্রাসন ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রভৃতির বিরুদ্ধে কলম ধরেন৷ ১৯৪৪ সালে তিনি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন। একই বছর বাংলার শোষিত মানুষের কর্মজীবন, ভবিষ্যত পৃথিবীর জন্য সংগ্রাম, সমাজের দুর্দশাজনিত বেদনা এবং স্বাধীন সমাজের স্বপ্ন প্রভৃতি নিয়ে লেখালেখি করতে 'আকাল' নামক একটি সংকলনগ্রন্থ সম্পাদনা করেন।

তিনি তারুণ্যের শক্তিতে বলীয়ান একজন ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর কবিতা পাঠ করে মানুষ অসীম সাহসী মনোভাব অর্জন করত এবং কর্মে স্পৃহা পেত। তিনি জেতার মূলমন্ত্র শিখিয়ে গেছেন। তিনি অসহায় ক্ষুধার্থ মানুষের কথা বলতেন ঠিক এই ভাবে..."ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি"।

তিনি ১৯৪০-১৯৪৭ পর্যন্ত লেখালেখির সুযোগ পান।।এই অল্প সময়েই তিনি বাংলা সাহিত্যজগতে নিজের মেধা ও স্বকীয়তায় জায়গা করে নিয়েছেন। হারিয়ে যাননি রবীন্দ্র, জীবনানন্দদের মতো উঁচুমানের কবি-লেখকদের ভীড়ে। তাঁর লেখনিতেই জীবনের বাস্তবতা ফুটে উঠে।

উল্লেখযোগ্য রচনাবলিঃ ছাড়পত্র, পূর্বাভাস, ঘুম নেই, মিঠে কড়া, গীতিগুচ্ছ, হরতাল ইত্যাদি

এই তরুণ মেধাবী কবি পার্টির কাজে অত্যধিক ব্যস্ত হয়ে পড়া, লেখালেখি ইত্যাদিতে অত্যধিক পরিশ্রম করেছেন এবং নিজের শরীরের যত্ন নেননি। ফলে ম্যালেরিয়া এবং দুরারোগ্য ক্ষয়রোগে ১৯৪৭ সালের ১৩ মে মাত্র ২১ বছর বয়সে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

বেগম রোকেয়া

বেগম রোকেয়া


বেগম রোকেয়া, যাঁর পুরো নাম বেগম রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেন। তিনি ছিলেন বাংলা নারী জাগরণের পথিকৃৎ।

তিমি ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার অন্তর্গত পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা একজন বিদ্যানুরাগী ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু মেয়েদের বিদ্যাশিক্ষার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন রক্ষণশীলদের অন্তর্ভুক্ত। তথাপি বেগম রোকেয়ার পাঁচ বছর বয়সে মায়ের সাথে কলকাতায় বসবাসকালীন এক ম্যামের কাছে বিদ্যা শিক্ষা হয়েছিল। পরে সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তাঁর বড় দু'ভাই কলকাতায় পড়াশোনার সুবাদে কুসংস্কারমুক্ত হয়ে যান।। তাঁর বড় বোনও বিদ্যানুরাগী ছিলেন। তাঁদের সহায়তায় গোপনে বেগম রোকেয়ার বিদ্যা শিক্ষা চলতে থাকে।

এরই মধ্যে ১৮৯৮ সালে ভাগলপুর নিবাসী উর্দুবাসী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সাথে তাঁর বিয়ে হয়ে যায়। তিনি বিদ্যানুরাগী, সাহিত্যানুরাগী পাশাপাশি কুসংস্কারমুক্ত ব্যক্তি ছিলেন। স্বামীর সহায়তায় তাঁর বিদ্যা লাভ ঘটে। এবং বাংলা-ইংরেজিতে দক্ষ হয়ে উঠেন। তাঁর সাহিত্যে পদার্পণও ঘটে। কিন্তু তাঁর বিবাহিত জীবন বেশিদিন ছিল না। ১৯০৯ সালের ৩ মে তাঁর স্বামী মারা যান। তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি সমাজ সংস্কার এবং নারী শিক্ষার বিস্তারে নিজেকে নিয়োজিত করেন। স্বামীর অর্থে ভাগলপুরেই ১৯০৯ সালের ১ অক্টোবর  তিনি 'সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল' প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমে এতে অবাঙালি মেয়েরা শিক্ষা লাভ করলেও পরবর্তীতে পর্দার অন্তরালে বাঙালি মেয়েরাও শিক্ষা লাভ করতে শুরু করে৷ এরপর সমাজ সংস্কার সাধনে ১৯১৬ সালে আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম' নামে বাঙালি নারীদের একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ১৯২৬ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত বাংলার নারী বিষয়ক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন এবং বক্তব্য প্রদান করেন।

তিনি ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, নারীবাদী লেখিকা, সমাজ সংস্কারক, নারী জাগরণ ও নারীদের শিক্ষাবিস্তারে অবদান রাখা এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি নারীদের দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার বাণী ছড়িয়ে দেন। নারীদের সম-অধিকার অর্জনের জন্য বলেন। পুরুষের চেয়ে নারীরা কোনো অংশে কম নয় তা তিনি প্রমাণ করেন। তিনি নারী এবং পুরুষকে একটি দ্বি-চক্রজানের সাথে তুলনা করেন। অর্থাৎ সাইকেলের একটি চাকা সমান না হলে তা যেমন চলে না, নারীরাও পুরুষদের সমান জ্ঞানার্জন এবং সবকিছুতে অবদান রাখার সুযোগ না পেলে সেই সংসারও অসমান চাকার সাইকেলের ন্যায় হবে। তিনি নারীদের পর্দার বাইরে বেরিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন। কারণ, এটা ধর্মান্ধতা। পর্দার অন্তরালে না থেকে নারীদের জ্ঞানার্জনের আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি কবিতা, প্রবন্ধ, বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ ইত্যাদি রচনা করেন। তিনি ছিলেন খুব যুক্তিবাদী মানুষ। হাস্য রসাত্মক, ব্যাঙ্গাত্মক এবং যুক্তির মাধ্যমে তিনি তাঁর লিখায় নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রাখতেন। ১৯০২ সালে 'পিপাসা' নামক একটি গল্প লিখার মাধ্যমে সাহিত্য জগতে তাঁর পদার্পণ ঘটে। এরপর একে একে তিনি রচনা করেন মতিচুর, অবরোধবাসিনী, সুলতানার স্বপ্ন ইত্যাদির মতো গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর লিখা শুরুতে নবনূর, সাওগাত, মোহাম্মদী ইত্যাদি পত্রিকায় প্রকাশিত হতো।

২০০৪ সালে তিনি বিবিসি বাংলার 'সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি' জরিপে ষষ্ঠ নির্বাচিত হয়েছিলেন। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। যা বাংলাদেশে নারীর নামে প্রথম কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর নামে হলের নাম রাখা হয়। এছাড়াও তাঁর জন্মস্থানে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক 'বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র' প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ সরকার ৯ ডিসেম্বর 'বেগম রোকেয়া দিবস' উদযাপন করে এবং একই দিনে বিশিষ্ট নারীদের অনন্য অর্জনের জন্য 'বেগম রোকেয়া পদক' প্রদান করা হয়।

১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

আলাওল

আলাওল


হা হা! এখনও মনে আছে, ছোটবেলায় আলাওলের কবিতা পড়ার সময় তাঁর নাম উচ্চারণ করতে পারতাম না। উচ্চারণ করতাম 'ওলৌল'। এটা নিয়ে বান্ধবীরা এখনও মাঝেমাঝে ক্ষ্যাপায়। 🤣

যাই হোক....এবার প্রসঙ্গে আসি।

মহাকবি আলাওল মধ্যযুগের একজন বিখ্যাত বাংলা কবি। আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ তাঁকে তৎকালের 'রবীন্দ্রনাথ' বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর জন্ম ১৫৯৩ সালে প্রাচীন গৌড়ের ফতেহাবাদে বর্তমান মাদারিপুর জেলার জালালাবাদে।

একদিন তিনি বাবার সাথে রোসাঙ্গ বা আরাকান (বর্তমান মায়ানমার) যাওয়ার পথে জলদস্যু কর্তৃক আক্রান্ত হন। এতে তাঁর পিতা মারা যান এবং তিনি জলদস্যু কর্তৃক বন্দি হলে পরবর্তীতে তাঁর স্থান হয় আরাকান রাজসভায়। এতে তাঁর কাব্যপ্রতিভা প্রকাশিত হলে আরাকান রাজার প্রধান আমাত্য মাগন ঠাকুরের সহযোগিতায় তিনি আরাকানের সভাকবি হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। এভাবে নানা চড়াই উতরাইয়ের মাধ্যমে তাঁর কাব্যচর্চা বিকশিত হয়।

তিনিই উনার সমসাময়িক কবিদের মধ্যে বৈশিষ্ট্যের বিচারে সর্বশ্রেষ্ঠ রচিত। ধর্মীয় ধারার কবিতার সমসাময়িকে রোমান্টিক প্রণয়কাব্য রচনায় মুসলমান কবিদের অবদান অনস্বীকার্য। তাঁদের মধ্যে আলাওল ছিলেন অন্যতম।

তিনি বাংলা, আরবি, ফার্সি, সংস্কৃত, যুদ্ধবিদ্যা, সঙ্গীত ইত্যাদি বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন।

তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ 'পদ্মাবতী', যা মালিক মুহাম্মদ জয়সীর হিন্দিকাব্য 'পদুমাবৎ' এর অনুবাদ কাব্যগ্রন্থ।তবে এতে তিনি সরাসরি অনুবাদ করেননি। তাঁর নিজস্ব স্বকীয়তা তিনি বজায় রেখেছেন। আলাওল তিন বছর সময় ব্যয়ে এর অনুবাদের কাজ শেষ করেন। একে একে তিনি রচনা করেছেন, সয়ফুলমুলক-বদিউজ্জামাল (এ দুটো ফারসি কাব্যগ্রন্থের অনুবাদ), হপ্তপয়কর, দৌলত কাজির অসমাপ্ত কাব্যগ্রন্থ 'সতীময়না'র লিখা শেষ করেন। এছাড়াও লোরচন্দ্রানী, রাগতালনামা, তোহফা, সেকান্দরনামা ইত্যাদিও তাঁর রচিত অনুবাদ ও মৌলিক গ্রন্থ। এছাড়াও কিছু গীতিকবিতাও রচনা করেছেন। রাগতালনামা ও গীতিকবিতাগুলো তাঁর মৌলিক গ্রন্থ। বাকিগুলো অনুবাদ গ্রন্থ।

১৬৭৩ সালে মহান এই পণ্ডিত কবির মৃত্যু ঘটে।

আরেকটা বিষয়ঃ গতবছর বাসা বদলানোর সময় উইপোকায় খাওয়া এক পুরনো 'পদ্মাবতী' বইয়ের উদ্ধার করেছিলাম। তা বোধহয় এখনও বস্তাবন্দিই আছে। বস্তা খুলে পড়ে দেখতে হবে।

কামিনী রায়

কামিনী রায়


কামিনী রায় বঙ্গীয় নবজাগরণকালের একজন প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি ছিলেন কবি, সমাজকর্মী এবং নারীবাদী লেখিকা। তিনি খুব ভাবুক এবং কল্পনাপ্রবণ ছিলেন। তিনিই প্রথম মহিলা, যিনি তৎকালীন বৃটিশ ইন্ডিয়ায় সংস্কৃত বিষয়ে কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে অনার্স ডিগ্রি প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তিনি সেসময় নারী শ্রম তদন্ত কমিশনের সদস্য এবং বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সহ-সভাপতি ছিলেন।

তিনি ১৮৬৪ সালের ১২ অক্টোবর বৃটিশ ভারতের (অধুনা বাংলাদেশ) বাকেরগঞ্জ জেলার বাসণ্ডা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

বাল্যকালে তাঁর পিতামহ তাকে স্তোত্র কবিতা আবৃত্তি করতে শেখাতেন এবং তাঁর মা তাকে গোপনে বর্ণমালা শেখাতেন। কারণ তখন মেয়েদের বিদ্যা শিক্ষা নেওয়া ঘোরতর অপরাধ এবং পাপ হিসেবে বিবেচিত হতো। সেই সময়েই মাত্র আট বছর বয়সে তিনি কবিতা রচনা শুরু করেন৷ তাঁর কবিতা পাঠে বিমোহিত হয়ে সিভিলিয়ান কেদারনাথ বসু তাঁকে বিয়ে করেছিলেন। পরবর্তীতে তাঁর স্বামী মারা গেলে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। যা তাঁর কবিতায় প্রকাশ পাওয়া যায়। পঁচিশ বছর বয়সে ১৮৮৯ সালে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'আলো ও ছায়া' প্রকাশিত হয়। হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় তার ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন।

তাঁর কবিতায় রবীন্দ্রনাথ এবং সংস্কৃত ভাষার প্রভাব বুঝতে পারা যায়। তিনি প্রথম দিকে 'জনৈক বঙ্গমহিলা' ছদ্মনামে লিখালিখি করতেন।

তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ১৯২৯ সালে 'জগত্তারিণী স্বর্ণপদক' প্রাপ্ত হন

রচনাবলিঃ আলো ও ছায়া, মাল্য ও নির্মাল্য, গুঞ্জন, ঠাকুরমার চিঠি, দীপ ও ধূপ, বালিকা শিক্ষার আদর্শ ইত্যাদি।

তিনি ১৯৩৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার হাজারীবাগে মৃত্যুবরণ করেন।

Tuesday, September 3, 2019

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় 


বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নাম। তিনি ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, গীতার ব্যাখ্যাদাতা, সাহিত্য সমালোচক, সরকারি কর্মকর্তা, হিন্দু নবজাগরণের অগ্রদূত।

২৭ জুন, ১৮৩৮ সালে চব্বিশ পরগণা জেলার নৈহাটি শহরের নিকটস্থ কাঁঠালপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

পাঁচ বছর বয়সে তাঁর শিক্ষাগ্রহণের হাতেখড়ি হয়। বাল্যকালে তিনি অসামান্য মেধার পরিচয় দেন। মাত্র একদিনেই তিনি বাংলা বর্ণমালা আয়ত্ব করেছিলেন।। শিক্ষাজীবনে তিনি বিভিন্ন বৃত্তি লাভ করেন। ১৮৫৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৮৫৮ সালে প্রথম বি.এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম ব্যাচে অংশ নেন দশ জন শিক্ষার্থী৷ তাদের মধ্যে উত্তীর্ণ হন মাত্র দুজন। তাঁরা হলেন, বঙ্কিমচন্দ্র এবং যদুনাথ বসু৷  কর্মজীবনে তিনি বৃটিশ সরকারের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর পদে যোগদান করেছিলেন।

কর্মজীবনে অতি নিষ্ঠার সাথে কাজ করার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৮৯১ সালে 'রায় বাহাদুর' এবং ১৮৯৪ সালে 'কম্প্যানিয়ন অফ দ্য দ্য মোস্ট এমিন্যান্ট অর্ডার অফ দ্য ইন্ডিয়ান এম্পায়ার' খেতাব অর্জন করেছিলেন।

মাত্র ১১ বছর বয়সে ৫ বছরের এক মেয়ের সাথে তাঁর বিয়ে হলেও ১০ বছর পর তার প্রথমা স্ত্রী মারা গেলে পরের বছর তিনি রাজলক্ষ্মী দেবীকে বিয়ে করেন।

১৮৫২ সালে কবিতা লেখার মাধ্যমে সাহিত্য চর্চার শুরু করেন খ্যাতিমান এই লেখক। 'কমলাকান্ত' এই নামকে তিনি ছদ্মনাম হিসেবে পছন্দ করেন। বাংলা গদ্য ও উপন্যাসের বিকাশে তাঁর অসামান্য অবদান রয়েছে। তিনি ছিলেন বাংলার প্রথম আদি পত্রিকা 'বঙ্গদর্শন'র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।

উল্লেখযোগ্য রচনাবলীঃ দুর্গেশনন্দিনী (এটি লেখকের রচিত এবং বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস) কপালকুণ্ডলা,  আনন্দমঠ, রাজসিংহ, দেবী চৌধুরানী, বৃষবৃক্ষ, কৃষ্ণকান্তের উইল, Rajmohan's Wife, কৃষ্ণ চরিত্র, ইন্দিরা, যুগলাঙ্গুরীয়, মৃণালিনী, লোকরহস্য, বিজ্ঞান রহস্য, কমলাকান্তের দপ্তর, সহজ ইংরেজি শিক্ষা ইত্যাদি।

১৮৯৪ সালের ৮ এপ্রিল বহুমূত্র রোগ বেড়ে গেলে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তথাপি তিনি বাংলা উপন্যাসকে অনেক উঁচু আঙ্গিকে পৌঁছিয়ে দিয়েছিলেন, যা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অতি স্মরণীয় হয়ে আছে।

Monday, September 2, 2019

বাংলা একাডেমি 


বাংলা একাডেমির সাথে আমরা কমবেশ সবাই পরিচিত। কারণ এটি একটি ভাষা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান। বাংলা ভাষায় যে কথা বলি তার প্রমিত রীতি বাংলা একাডেমি কর্তৃক অনুসৃত। এটি ১৯৫৫ সালে ৩ ডিসেম্বর ঢাকার বর্ধমান হাউজে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী আবু হোসেন সরকার। এই একাডেমি প্রতিষ্ঠার পেছনে অবদান রাখেন ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও চেষ্টা চালায় তবে তা ব্যর্থ হয়৷ বর্তমানে এর মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। বাংলা একাডেমির সর্বোচ্চ পদমর্যাদা ফেলো। এর ৪টি বিভাগ রয়েছে। তা হলো-
-গবেষণা, সংকলন ও ফোকলোর বিভাগ
-ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও পত্রিকা বিভাগ
-পাঠ্যপুস্তক বিভাগ
-প্রাতিষ্ঠানিক পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণ বিভাগ

এটি ২০১০ সালে সাহিত্য চর্চায় অবদানের জন্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক 'স্বাধীনতা পুরস্কার' লাভ করেছিল। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি নিজেও 'বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার' প্রদান করে বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ। এটি প্রবর্তিত হয় ১৯৬০ সালে। এটি বাংলা ভাষা নিয়ে গবেষণা, গ্রন্থ প্রকাশ ও সম্পাদনা, ভাষান্তরকরণ, বাংলা অভিধান, ইংরেজি, উর্দু ভাষার অভিধান রচনাসহ নানাবিধ কাজ করে থাকে। এটি বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলা একাডেমি চত্বরে বইমেলাও অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণসহ সাহিত্য ও শিল্পে প্রতিষ্ঠানটি ব্যাপক অবদান রেখে আসছে।

ধন্যবাদ সবাইকে।

শামসুর রাহমান শামসুর রাহমান ছিলেন আধুনিক বাংলা কবিতার রূপকার। বিংশ শতকের তিরিশের দশকের পাঁচ মহান কবির পর তিনিই আধুনিক বাংলা কবিতার প্র...