Wednesday, September 4, 2019

বেগম রোকেয়া

বেগম রোকেয়া


বেগম রোকেয়া, যাঁর পুরো নাম বেগম রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেন। তিনি ছিলেন বাংলা নারী জাগরণের পথিকৃৎ।

তিমি ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার অন্তর্গত পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা একজন বিদ্যানুরাগী ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু মেয়েদের বিদ্যাশিক্ষার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন রক্ষণশীলদের অন্তর্ভুক্ত। তথাপি বেগম রোকেয়ার পাঁচ বছর বয়সে মায়ের সাথে কলকাতায় বসবাসকালীন এক ম্যামের কাছে বিদ্যা শিক্ষা হয়েছিল। পরে সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তাঁর বড় দু'ভাই কলকাতায় পড়াশোনার সুবাদে কুসংস্কারমুক্ত হয়ে যান।। তাঁর বড় বোনও বিদ্যানুরাগী ছিলেন। তাঁদের সহায়তায় গোপনে বেগম রোকেয়ার বিদ্যা শিক্ষা চলতে থাকে।

এরই মধ্যে ১৮৯৮ সালে ভাগলপুর নিবাসী উর্দুবাসী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সাথে তাঁর বিয়ে হয়ে যায়। তিনি বিদ্যানুরাগী, সাহিত্যানুরাগী পাশাপাশি কুসংস্কারমুক্ত ব্যক্তি ছিলেন। স্বামীর সহায়তায় তাঁর বিদ্যা লাভ ঘটে। এবং বাংলা-ইংরেজিতে দক্ষ হয়ে উঠেন। তাঁর সাহিত্যে পদার্পণও ঘটে। কিন্তু তাঁর বিবাহিত জীবন বেশিদিন ছিল না। ১৯০৯ সালের ৩ মে তাঁর স্বামী মারা যান। তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি সমাজ সংস্কার এবং নারী শিক্ষার বিস্তারে নিজেকে নিয়োজিত করেন। স্বামীর অর্থে ভাগলপুরেই ১৯০৯ সালের ১ অক্টোবর  তিনি 'সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল' প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমে এতে অবাঙালি মেয়েরা শিক্ষা লাভ করলেও পরবর্তীতে পর্দার অন্তরালে বাঙালি মেয়েরাও শিক্ষা লাভ করতে শুরু করে৷ এরপর সমাজ সংস্কার সাধনে ১৯১৬ সালে আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম' নামে বাঙালি নারীদের একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ১৯২৬ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত বাংলার নারী বিষয়ক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন এবং বক্তব্য প্রদান করেন।

তিনি ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, নারীবাদী লেখিকা, সমাজ সংস্কারক, নারী জাগরণ ও নারীদের শিক্ষাবিস্তারে অবদান রাখা এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি নারীদের দাসত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার বাণী ছড়িয়ে দেন। নারীদের সম-অধিকার অর্জনের জন্য বলেন। পুরুষের চেয়ে নারীরা কোনো অংশে কম নয় তা তিনি প্রমাণ করেন। তিনি নারী এবং পুরুষকে একটি দ্বি-চক্রজানের সাথে তুলনা করেন। অর্থাৎ সাইকেলের একটি চাকা সমান না হলে তা যেমন চলে না, নারীরাও পুরুষদের সমান জ্ঞানার্জন এবং সবকিছুতে অবদান রাখার সুযোগ না পেলে সেই সংসারও অসমান চাকার সাইকেলের ন্যায় হবে। তিনি নারীদের পর্দার বাইরে বেরিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন। কারণ, এটা ধর্মান্ধতা। পর্দার অন্তরালে না থেকে নারীদের জ্ঞানার্জনের আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি কবিতা, প্রবন্ধ, বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ ইত্যাদি রচনা করেন। তিনি ছিলেন খুব যুক্তিবাদী মানুষ। হাস্য রসাত্মক, ব্যাঙ্গাত্মক এবং যুক্তির মাধ্যমে তিনি তাঁর লিখায় নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রাখতেন। ১৯০২ সালে 'পিপাসা' নামক একটি গল্প লিখার মাধ্যমে সাহিত্য জগতে তাঁর পদার্পণ ঘটে। এরপর একে একে তিনি রচনা করেন মতিচুর, অবরোধবাসিনী, সুলতানার স্বপ্ন ইত্যাদির মতো গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর লিখা শুরুতে নবনূর, সাওগাত, মোহাম্মদী ইত্যাদি পত্রিকায় প্রকাশিত হতো।

২০০৪ সালে তিনি বিবিসি বাংলার 'সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি' জরিপে ষষ্ঠ নির্বাচিত হয়েছিলেন। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। যা বাংলাদেশে নারীর নামে প্রথম কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর নামে হলের নাম রাখা হয়। এছাড়াও তাঁর জন্মস্থানে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক 'বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র' প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ সরকার ৯ ডিসেম্বর 'বেগম রোকেয়া দিবস' উদযাপন করে এবং একই দিনে বিশিষ্ট নারীদের অনন্য অর্জনের জন্য 'বেগম রোকেয়া পদক' প্রদান করা হয়।

১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

No comments:

শামসুর রাহমান শামসুর রাহমান ছিলেন আধুনিক বাংলা কবিতার রূপকার। বিংশ শতকের তিরিশের দশকের পাঁচ মহান কবির পর তিনিই আধুনিক বাংলা কবিতার প্র...